রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন

উপকূল ভেসে যাবে ২১০০ সালের মধ্যে

উপকূল ভেসে যাবে ২১০০ সালের মধ্যে

স্বদেশ ডেস্ক:

বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ে নতুন প্রতিবেদনে জাতিসংঘ বলেছে, মানুষের কর্মকা-ের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে অপ্রত্যাশিত এবং অপরিবর্তনীয় উপায়ে। এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে ঝুঁঁকিতে পড়বেন কোটি কোটি মানুষ। ২১০০ সালের মধ্যে ভেসে যাবে উপকূল। জাতিসংঘের এ গবেষণা প্রতিবেদনকে ল্যান্ডমার্ক বা মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এতে ক্রমবর্ধমান চরম দাবদাহ, খরা এবং বন্যার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাপমাত্রা হলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাপমাত্রার যে সীমা, তা এক দশকের মধ্যে ভঙ্গ হতে পারে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ প্রতিবেদনকে মানবতার জন্য একটি লাল কোড হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

জলবায়ু নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে নিম্নাঞ্চল, বিশেষ করে সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি বসবাসকারীদের সম্পর্কে খুব বেশি সতর্কতা দেয়া হয়েছে। বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে, কার্বন নির্গমন বড় অঙ্কে কমিয়ে না আনলে উপকূলীয় এলাকা পানিতে ডুবে যাবে। বাস্তুচ্যুত হবে কোটি কোটি মানুষ। এর পরপরই অনলাইন স্কাইনিউজ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে কি প্রভাব পড়বে তার একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। তাতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে এরই মধ্যে বাংলাদেশের হাজার হাজার

মানুষ তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে যেসব মানুষের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, যারা নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে বা হবেন, তার মধ্যে আছে এসব মানুষ। এরা এরই মধ্যে এমন বাস্তবতার মুখোমুখি।

এদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নিলে এ বিপর্যয় এখনো কাটিয়ে উঠা সম্ভব। গ্রিনহাউজ গ্যাসকে যদি খুব বেশি কর্তন করা সম্ভব হয় তা হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি স্থিতিশীল রাখা যেতে পারে। ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) ‘সামারি ফর পলিসিমেকার্স’ শীর্ষক ৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে সোমবার এসব নিরপেক্ষ মূল্যায়ন হাজির করেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। বিজ্ঞানীদের এ গবেষণার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে জাতিসংঘ মহাসচিবের কণ্ঠে। তিনি বলেছেন, যদি আমরা এখনই সব শক্তি একসঙ্গে যুক্ত করি, তা হলে জলবায়ু পরিবর্তনের এ বিপর্যয়কে এড়াতে পারব। কিন্তু এ রিপোর্টে এটা পরিষ্কার করা হয়েছে যে, বিলম্ব করার মতো কোনো সময় নেই। কোনো অজুহাত দাঁড় করানোর কোনো স্থান নেই। তাই আমি সরকারগুলোর নেতাদের এবং সব অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, সিওপি২৬’কে সফল করার জন্য। আইপিসিসি এসব নিয়ে ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করবে সামনের মাসগুলোতে। ২০১৩ সালের পর এটাই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বড় বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন। গ্লাসগোতে তিন মাসেরও কম সময় আগে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন হয়েছে, যা সিওপি২৬ নামে পরিচিত।

১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করে আইপিসিসি। এর উদ্দেশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন হাজির করা। সরকারগুলোকে বৈজ্ঞানিক তথ্য সরবরাহ করা। তারা রিপোর্টে আস্থার সঙ্গে দৃঢ়তায় বলেছে, দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, মানুষের প্রভাবে আবহাওয়া, সমুদ্র ও স্থলভাগ উষ্ণ হয়ে উঠেছে। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের প্রফেসর এবং এ রিপোর্টের অন্যতম লেখক এড হকিন্স বলেছেন, এ রিপোর্টে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা সত্য। এর চেয়ে বেশি সুনির্দিষ্ট আমরা হতে পারি না। এতে যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা দ্ব্যর্থহীন এবং অনাপত্তিকর যে, এ গ্রহকে উষ্ণ করে তুলছে মানুষজাতি। ওয়ার্ল্ড মেটেওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের মহাসচিব পেত্তেরি তালাস বলেছেন, খেলাধুলার টার্ম ব্যবহার করে কেউ বলতে পারেন, আবহাওয়ায় ‘ডোপের’ প্রকাশ ঘটেছে। এর অর্থ হলো, আমরা আগের চেয়ে অধিক চরম প্রতিকূলতা দেখতে শুরু করেছি।

এ প্রতিবেদনে লেখকরা বলেছেন, ১৯৭০ সাল থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা গত ২০০০ বছরের মধ্যে যে কোনো ৫০ বছরের তুলনায় অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এ উষ্ণতা এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে প্রতিটি অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। সম্প্রতি চরম দাবদাহ প্রত্যক্ষ করেছে গ্রিস এবং উত্তর আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল। বন্যা হয়েছে জার্মানি ও চীনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা যা ছিল তার চেয়ে ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এক দশকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ১.০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৮৫০ সালের পর গত পাঁচ বছর ছিল সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত ছিল পৃথিবী। ১৯০১ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যেটুকু বৃদ্ধি পেয়েছিল তার তিনগুণ হয়েছে সম্প্রতি। ১৯৯০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত হিমবাহ গলার জন্য প্রধানত দায়ী হলো মানুষ। এ জন্য তারা শতকরা ৯০ ভাগ দায়ী। এর ফলে আর্কটিক সাগরের বরফ কমে যাচ্ছে। ফলে এটা এখন কার্যত নির্দিষ্ট যে, দাবদাহসহ উত্তপ্ত চরম অবস্থা ঘনঘন আঘাত হানছে। ১৯৫০-এর দশকের পর তা অনেক বেশি তীব্র হয়েছে। অন্যদিকে শীত সংক্রান্ত ইভেন্ট অনেকটা কমে গেছে এবং তার ভয়াবহতা অনেক কম।

এতে আরও বলা হয়েছে, সমুদ্র আরও উষ্ণ হবে। ফলে সমুদ্র আরও এসিটিক হয়ে উঠবে। দশকের পর দশক অথবা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পাহাড় ও মেরু অঞ্চলের হিমবাহ বা বরফ গলা অব্যাহত থাকবে। প্রফেসর হকিন্স বলেন, এর পরিণতিতে উষ্ণতার কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপ হতে থাকবে। এর মধ্যে এমন কিছু পরিণতি আছে, যা থেকে পেছন দিকে অর্থাৎ আগের অবস্থায় আর যাওয়া যাবে না। যখন বিষয়টি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আসে, তখন বিজ্ঞানীরা কার্বন নির্গমনের বিভিন্ন লেভেলের মডেল সামনে আনেন। ফলে এ শতাব্দীর শেষের দিকে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি প্রায় ২ সেন্টিমিটার হওয়ার বিষয় উপেক্ষা করা যায় না। এ ধারা অব্যাহত থাকলে তা ২১৫০ সালে ৫ সেন্টিমিটারে দাঁড়াতে পারে। এমন হলে তাতে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করা কোটি কোটি মানুষের জীবন হুমকিতে পড়বে। ২১০০ সালের মধ্যে বন্যায় ভেসে যাবে উপকূলীয় অঞ্চল।

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ ২০১৫ সালের মধ্যে প্যারিস জলবায়ুবিষয়ক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল এ শতাব্দীতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ধরে রাখা এবং বিশেষ করে একে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করা। কিন্তু নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা যেসব বৈজ্ঞানিক তথ্য বিবেচনা করেছেন কার্বন নির্গমনের ক্ষেত্রে, তাতে যদি কার্বন নির্গমণ ব্যাপক আকারে কমিয়ে রাখা না যায়, তা হলে এ শতাব্দীতেই উভয় টার্গেট ভেঙে পড়বে। রিপোর্টের লেখকরা মনে করেন, সব কিছুর বিবেচনায় ২০৪০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পৌঁছে যাবে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি দুই তিন বছরের মধ্যে কার্বন নির্মাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা না যায়, তা হলে এ ঘটনা আরও আগে ঘটতে পারে। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের ড. ফ্রেডেরিক ওটো বলেছেন, আমাদের আরও তীব্র, আরও ঘনঘন দাবদাহ দেখতে হবে। সারাবিশ্বে আমাদেরকে ভারী বর্ষণের বৃদ্ধি দেখতে হবে। দেখতে হবে আরও ভয়াবহ খরা। প্রতিবেদনের ডকুমেন্ট তৈরি করেছে যে ওয়ার্কিং গ্রুপ তার ভাইস চেয়ার প্রফেসর ক্যারোলাইনা ভেরা বলেছেন, এ রিপোর্টে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, আমরা এরই মধ্যে প্রতিটি স্থানে জলবায়ুর পরিবর্তনের যে পরিণতি তার মধ্যে বসবাস করছি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877